স্বদেশ ডেস্ক: স্থানীয় একটি অসাধু চক্রের কারণে অনেকটা হাত বাড়ালেই মোবাইল ফোনের সিম পাচ্ছে কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গারা। ওই চক্রটি দুই বা তিনগুণ মূল্যে এসব সিম তুলে দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের হাতে। এসব সিমের রেজিস্ট্রেশন বাংলাদেশিদের নামে। আর এ সিম ব্যবহার করে রোহিঙ্গারা এতদিন থ্রিজি, ফোরজি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ব্যবহার করত ইন্টারনেট। এমনকি নানা অপরাধমূলক কর্মকা-েও ব্যবহার হতো তাদের হাতে থাকা নম্বরগুলো। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন সবকিছু জেনেও এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তবে গত ২৫ আগস্ট উখিয়ায় রোহিঙ্গারা যে বিশাল সমাবেশ করে, সেখানে অনেকের হাতে মোবাইল ফোন দেখে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার রোহিঙ্গারা যেন মোবাইল ফোন সুবিধা না পায়, সে জন্য সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে সব ফোন অপারেটরকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। যাদের অধিকাংশের হাতেই রয়েছে স্মার্টফোন। অবৈধ সিম সংগ্রহ করে তারা এ ফোনে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, টুইটার,
ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংযুক্ত থাকছে। এসব এতদিন তারা ব্যবহার করেছে নিজেদের সংগঠিত করার কাজে। আবার মিয়ানমারের রাখাইন সীমান্তের কিছু অংশে বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক সক্রিয় থাকায় সেখানেও তারা যোগাযোগ করছে। কেউ কেউ আবার এর মাধ্যমে পাচার করছে তথ্যও।
থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৯ এ-ব্লকের মাঝি আজিজ উল্লাহ বলেন, দুই বছর আগে চট্টগ্রামের দোহাজারী থাকাকালে ২০০ টাকা দিয়ে তিনি রবি সিম কেনেন। এ সিম কিনতে গিয়ে তার আইডি কার্ড বা আঙুলের ছাপ দিতে হয়নি। তবে তার পরিবারের অন্য কারও মোবাইল ফোন নেই। দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থেই তিনি এ নম্বর ব্যবহার করেন। ক্যাম্প ৫-এর ব্লক জি ২-এর মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, বছর দেড়েক আগে স্থানীয় এক যুবকের কাছ থেকে ১৫০ টাকায় তিনি একটি সিম কিনে এখনো ব্যবহার করছেন। ক্যাম্প জি ২-এর মাঝি মোহাম্মদ হোছেন বলেন, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর কুতুপালং টিভি টাওয়ার এলাকা থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে তিনি একটি নিবন্ধিত সিম এবং ৩ হাজার টাকা দিয়ে মোবাইল ফোন সেট কেনেন। সিম কিনতে তাকেও আইডি কার্ড বা আঙুলের ছাপ দিতে হয়নি।
উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, এ অব্যবস্থাপনার জন্য ক্যাম্প প্রশাসন, টেলিকম কোম্পানি এবং স্থানীয়রা দায়ী। স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম রোহিঙ্গাদের হাতে তুলে দিচ্ছে। ক্যাম্প ইনচার্জ, পুলিশ প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন এসব দেখেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে ক্যাম্পকেন্দ্রিক ছোট-বড় যে কোনো ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করতে সক্ষম হচ্ছে রোহিঙ্গারা। এতে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ হওয়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও ব্যাহত হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করে ক্যাম্প ৭-এর ইনচার্জ হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ বলেন, তারা যেহেতু বিদেশি নাগরিক, সে ক্ষেত্রে তাদের এ দেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার বৈধ নয়। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে রোহিঙ্গারা সিম সংগ্রহ করে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। এটি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে ক্যাম্প এলাকায় রোহিঙ্গাদের যোগাযোগের জন্য টেলিটক বুথ স্থাপনের পরামর্শ দেন তিনি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন জানান, রোহিঙ্গাদের ব্যবহৃত সিমগুলো স্থানীয় বাংলাদেশিদের নামে নিবন্ধিত। তবে রোহিঙ্গারা যাতে মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকা- চালাতে না পারে, সে ব্যাপারে প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।
উখিয়ায় মোবাইল ফোন অপারেটর এয়ারটেলের সাবেক পরিবেশক হামিদুল হক জানান, রবি ও এয়ারটেলের এসএমই নামে দুটি প্রোডাক্ট আছে। একটি চক্র বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স জালিয়াতি করে করপোরেট সিমের নামে হাজার হাজার সিম রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাচার করছে। ইতিপূর্বে এ ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে কুতুপালং এলাকা থেকে হাসান এবং হাশেম নামে দুই যুবককে পুলিশ আটক করেছিল। কিন্তু তারা এখন জামিনে বেরিয়ে গেছে। সম্প্রতি ফ্রেন্ডশিপ নামে এনজিও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য একটি ফোন কোম্পানির এসএমই কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রায় ২০০ সিম সংগ্রহ করেছে বলে জানান তিনি।